১৭৮৩ সালে ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল (John Michell) ‘ডার্ক স্টার’ (dark stars) শিরোনামে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেন। তার গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু ছিল “বিপুল পরিমাণ ভর বিশিষ্ট কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না”। এখান থেকেই মূলত ব্ল্যাক হোল এর ধারণা আসে এবং এটি নিয়ে গবেষনা ও অনুসন্ধান শুরু হয়।
একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল হল মহাকাশের এমন একটি স্থান যেখানে মধ্যাকর্ষণ বল এতটাই শক্তিশালী যে সেখান থেকে কোন কিছুই বের হতে পারে না। এমনকি আলোর মত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণও এই প্রচন্ড আকর্ষণ বল ভেদ করে বের হয়ে আসতে পারে না।
যেহেতু এখান থেকে কোন আলো বেরোতে পারে না, আমরা খালি চোখে এদের দেখতে পাই না। তারা সম্পূর্ন অদৃশ্য হয়। তবে বিশেষ সরঞ্জাম সহ স্পেস টেলিস্কোপগুলি ব্ল্যাক হোলের সন্ধান করতে সহায়তা করে। এদের দেখা না গেলেও আইনস্টাইনের বিখ্যাত সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, মহাশূন্যে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব থাকতে পারে এবং এত ভারি ভরের কোন স্থান অবশ্যই তার চারদিকের স্পেসটাইম কে বিকৃত করবে। সম্প্রতি এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাক হোল এর প্রথম চিত্র ধারন করা। ব্ল্যাক হোলের যে অঞ্চল থেকে কোন কিছু বের হয়ে আসতে পারে না তাকে ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত বলে। একটি ব্ল্যাক হোল একটি আদর্শ কালো বস্তুর মতো কাজ করে, কারণ এটি কোন আলো প্রতিফলিত করে না।
সাধারনত ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় বৃহৎ কোন নক্ষত্রের নিজ কেন্দ্রে সংকুচিত হওয়ার ফলে। একটি নক্ষত্রকে ব্ল্যাক হোকে পরিনত হতে গেলে তার যথেষ্ট ভর থাকতে হবে। সাধারনত ৩ সৌর ভরের চেয়ে বেশি ভরের নক্ষত্রগুলো সুপারনোভা বিস্ফোরনের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোলে পরিনত হয়। কোন নক্ষত্রের মৃত্যুপূর্ব ভর কমপক্ষে ৩ সৌর ভর হলে এর কেন্দ্রে ভর সংকোচন সুপারনোভা বিস্ফোরন ঘটাতে পারে এবং ব্ল্যাক হোল এর সৃষ্টি করতে পারে।
একটি ব্ল্যাক হোল কোন গ্যালাক্সির যে কোন স্থানে থাকতে পারে। স্টেলার ব্ল্যাকহলগুলি কোন গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তবে প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি সুপাম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থাকে। সম্পূর্ন গ্যালাক্সিটি এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের চারদিকে ঘুরতে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে একটি ছোট গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল থাকতে পারে। তবে বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রে সবসময় একটি সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থাকে।
আমাদের গ্যালিক্সিতেও ব্ল্যাক হোল রয়েছে, তাও আবার কয়েক শত মিলিয়ন। Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics এর একটি গবেষণা থেকে জানা যায় আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে কয়েক শত মিলিয়ন স্টেলার ব্লাকহোল রয়েছে। আবার নাসার তথ্যমতে আমাদের গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০ মিলিয়ন স্টেলার ব্ল্যাক হোল রয়েছে।
আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে যে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে তার নাম Sagittarius A*। এই ব্ল্যাক হোলকটির ভর আমাদের সূর্যের ভরের প্রায় ৪ মিলিয়ন গুন বেশি। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সৌরজগত থেকে এই ব্ল্যাক হোল টির দূরত্ব প্রায় ২৬০০০ আলোকবর্ষ।
ব্ল্যাক হোল হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। হকিং রেডিয়েশন একটি অতি ধীর প্রক্রিয়া। যে কারণে একটি ব্ল্যাক হোল অনেক দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। সূর্যের ভরের সমান একটি ব্ল্যাক হোল ক্ষয় হতে প্রায় 10^67 বছর সময় নেয়। মিল্কিওয়ে কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোলটির ক্ষয় হতে 10^87 বছর সময় লাগবে।